অপ্রয়োজনীয়
ওষুধ কেন খাবেন? নিরাময় প্রতিটি মানুষের সহজাত
নিরাময় প্রতিটি মানুষের সহজাত। আসলে শুধু
মানুষ না, নিরাময় প্রতিটি প্রাণেরই সহজাত, স্বাভাবিক ব্যাপার। একটা গাছের কথাই
ধরেন। অনেক সময় গাছের ডাল একটু ভেঙে যায়, বা মচকে যায়। যদি ডালটাকে ঐ অবস্থায়ই
রেখে দেয়া হয় তাহলে কিছুদিন পরে দেখা যায় ভাঙা জায়গাটা ঠিক হয়ে গেছে। জায়গাটা একটু
ফুলে আছে, কিন্তু জোড়া লেগে গেছে।
এই
জোড়াটা কে লাগায় ? এই জোড়াটা লাগায় গাছের ডিএনএ র মধ্যে যে ডাক্তার বসে আছে, সেই
ডাক্তার।
মানুষের
ডিএনএতে ও বসে আছে তার নিজস্ব ডাক্তার। আর মানুষের দেহ হল সবচেয়ে সেরা ফার্মেসী।
দেহ নিজের জন্য যে ওষুধ তৈরী করে তা কিন্তু সম্পূর্ণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত।
ওষুধের
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যে কি জিনিস একবার সেটা দেখার সুযোগ হয়েছিল। আমার মা বহু বছর
ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগেছেন। দামি দামি ইনহেলার ব্যবহার করতেন। এর পরেও একবার রমজান
মাসের শেষ দিকে তার হঠাৎ সিভিয়ার অ্যাজমা অ্যাটাক হল। প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিনি
হাসপাতালে ভর্তি হলেন। ভর্তির সাথে সাথেই তার মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে দেয়া হল।
নির্দিষ্ট সময় পরপর নেবুলাইজার দেয়া হচ্ছে, পাশাপাশি হাই পাওয়ারের অ্যান্টিবায়োটিক
ওষুধ আর ইনজেকশান তো আছেই। কিন্তু কোনো ভাবেই কোনো উন্নতি হচ্ছেনা। যতক্ষণ মুখে
অক্সিজেন মাস্ক লাগানো ততক্ষন ঠিকভাবে শ্বাস নিচ্ছেন, যখনই টয়লেটে যাবার জন্য বা
অন্য কোনো কারণে অক্সিজেন মাস্ক খুলছেন, একটু পরেই দম বন্ধ হয়ে ছটফট করে উঠছেন।
আমরা যখন
দেখলাম হাসপাতালে ভর্তির চারদিন পরেও তার অবস্থার কোনো উন্নতি নেই তখন আমরা
হাসপাতাল পরিবর্তনের কথা চিন্তা করলাম। ঈদের আগের দিন আমরা তাকে আরেক হাসপাতালে
নিয়ে ভর্তি করলাম। ডাক্তার পরিবর্তন হল। সেখানেও চিকিৎসা চলতে থাকল। এভাবে সেই
হাসপাতালেও বেশ কিছুদিন কেটে গেল। কিন্তু একই ব্যাপার। শ্বাসের কোনো উন্নতি নেই।
এদিকে অনেকদিন ধরে বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ আর ইনজেকশান ব্যবহারের ফলে বেশ
কিছু নতুন সমস্যা দেখা দিল। হাত পা সহ সারা শরীর ফুলে যেতে শুরু করল। উনি
সবকিছু কিছু ভুলে যেতে শুরু করলেন। এমনকি
নামায কিভাবে পড়তে হয় সেটা পর্যন্ত ভুলে গেলেন। নামাযের সময় তাকে পাশ থেকে বলে
দিতে হত এখন এই দোয়া পড়েন, এখন এই সুরা পড়েন।
এই
বিষয়টা আমাকে মনে খুব কষ্ট দিল। যে মানুষটাকে আমি কখনোই ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ কাজা
করতে দেখিনি সে যদি নামাজ ভুলে যায় তাহলে বিষয়টা কেমন দেখায়?
পাশাপাশি
আমার আরেকটা ব্যাপার মনে হচ্ছিল যে, এই সবই হচ্ছে কোনো না কোনো ওষুধের সাইড
এফেক্ট। কারণ আমি দেখছিলাম ওনার হাত পা সহ পুরো শরীর অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যাচ্ছিল।
১৪ দিন
পরেও যখন কোনো উন্নতি হলনা তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম ওনাকে বাসায় নিয়ে আসব।
হাসপাতাল
থেকে আমরা অক্সিজেন সিলিন্ডার সহ ওনাকে বাসায় নিয়ে আসলাম। আমাদের বাসার সবচেয়ে ভাল
রুমটা, যে রুমে সবচাইতে বেশি আলো বাতাস ঢোকে সেই রুমে ওনাকে রাখা হল।
বাসায়
আনার পরে প্রথমেই আমি যে কাজটি করলাম সেটা করতে অনেকেই সাহস করবেন না। সেটা হল
ওনার সব ওষুধ বন্ধ করে দিলাম। তবে পথ্য হিসেবে কিছু প্রাকৃতিক খাবার যেমন মধু,
কালোজিরা, বাদাম এগুলো খাওয়াচ্ছিলাম। পাশাপাশি নিয়মিত বেশ কয়েকবার করে দম চর্চা
করানো শুরু করলাম।
জানালার সামনে
উনি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বুক ফুলিয়ে লম্বা দম নেন নাক দিয়ে। এর পরে মুখ দিয়ে বেশ সময়
নিয়ে আস্তে আস্তে দম ছাড়েন। পাশাপাশি প্রতিদিন নিয়মিত দুবার তিনবার করে মেডিটেশন
করেন।
এভাবে
কিছুদিন চর্চা করার পরে ওনার শ্বাস প্রশ্বাস কিছুটা স্বাভাবিক হল। অক্সিজেন মাস্ক
ছাড়াই উনি স্বাভাবিকভাবে থাকতে শুরু করলেন। ধীরে ধীরে ওনার হাত পায়ের ফোলা কমে
গিয়ে শরীর স্বাভাবিক হয়ে এল।
আমার মনে
আছে একদিন উনি চারবার শিথিলায়ন মেডিটেশন করেছিলেন। সেদিন রাতেও ওনাকে এশার নামাজ
পড়িয়ে দিতে হয়েছিল। কিন্তু এর পরের দিন ফজরের নামাজ থেকে উনি একাই নামাজ পড়তে শুরু
করলেন।
শুকুর আল
হামদুলিল্লাহ উনি এখন একটা ওষুধের টুকরাও খাননা। নিয়মিত দমচর্চা করেন, দু-বেলা
মেডিটেশন করেন। যখন যেখানে প্রয়োজন সেখানে যান। আমার সাথে লামায় গিয়েছেন। সেখানে
পাহাড়েও উঠেছেন দু দিন।
এই যে
নিরাময় ক্ষমতা, এটা কিন্তু ওনার ভেতরেই ছিল। কিন্তু উনি যতদিন পর্যন্ত নিরাময়ের
জন্য অন্যের উপর ভরসা করেছেন। ততদিন পর্যন্ত কষ্টকর জীবন কাটিয়েছেন। গাঁদা গাঁদা
ওষুধ খেয়েছেন। আর যখন আল্লাহর উপর ভরসা করে নিজের নিরাময়ের দায়িত্ব নিজেই নেবার
চেষ্টা করেছেন আল্লাহ তাকে সাহায্য করেছেন। এখন উনি প্রতি মাসে ওষুধের টাকা বেঁচে যাওয়ায়
সেই টাকা থেকে কিছু টাকা এতিমদের জন্য নিয়মিতভাবে দান করছেন।
চিকিৎসা
বিজ্ঞানীরা আগে বলতেন না কিন্তু এখন স্বীকার করেন যে শতকরা ৭৫ ভাগ রোগের জন্য
ওষুধ, সার্জারী, থেরাপী কিচ্ছু প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র মনটাকে ভালো রাখুন। নিজেই
নিজের যত্ন নিন, ভালো হয়ে যাবেন। কারণ এই ৭৫ ভাগ রোগ হচ্ছে মনোদৈহিক। এই রোগগুলোর
উৎস হচ্ছে মন, কিন্তু প্রভাব দেখা দেয় শরীরে।
এইযে
আমাদের দেশের মহিলাদের এত ব্যাথা, কোমরে ব্যাথা, ব্যাক পেইন, হাটুতে ব্যাথা কেন ?
কারণ তারা প্রতিনিয়ত সংসারে যে মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করছেন তার প্রভাব এসে পড়ছে
শরীরে। ব্রেইনের স্ট্রেস শরীরে রোগ তৈরী করে দিচ্ছে। অথচ এটার সমাধান কিন্তু খুব
সহজ। আপনি নিয়মিত মেডিটেশন করুন, মনের বিষগুলোকে বের করে দিন। আপনি রোগগ্রস্থ হবেন
না। বরং আপনার চেহারার লাবণ্য বাড়বে, আপনাকে প্রাণবন্ত দেখাবে।
শুনলে
মনে হয় এটা বুঝি অলৌকিক কিছু। আসলে এটা কিন্তু পিউর সাইন্স। একটা ঘরের কথা চিন্তা
করেন। ঘরটা যদি আবর্জনা দিয়ে ভরে থাকে তাহলে সেখানে যত দামি এয়ার ফ্রেশনারই
ব্যবহার করি না কেন দুর্গন্ধ যাবেনা। মনের অবস্থাও তাই। রাগ ক্ষোভ, ঈর্ষা, ঘৃণা,
অহঙ্কার, গীবতের চিন্তা দিয়ে যদি মন ভরে থাকে তাহলে কিন্তু দেহ সুস্থ থাকতে
পারেনা। নবীজী (সাঃ) একটি হাদীস আছে এ বিষয়ে সেটি হল “ মনের দূষণ দেহকে অসুস্থ
করে। মন দূষণ মুক্ত হলে দেহ সুস্থ হয়ে যায়। তাই দেহের পাশাপাশি মনের যত্ন নেয়াও
গুরুত্বপূর্ণ।
মনকে
ভালো রাখার জন্য মেডিটেশন কিন্তু চমৎকার একটা জিনিস। দিনের কাজ শুরু করার আগে
মাত্র ৩০ মিনিট মেডিটেশন করলে তরতাজা সজীব অনুভূতি নিয়ে প্রাণবন্ত একটা দিন কাটানো
যায়।
মেডিটেশন
করলে শুধু যে ভালো দিন কাটবে তা না, ওষুধ বা চিকিৎসার খরচও কমে যাবে। একটা গবেষনায়
দেখা গেছে যারা মেডিটেশন করেন তাদের ডাক্তারের কাছে যাবার প্রয়োজনীয়তা
তুলনামূলকভাবে কম। একজন মধ্যবয়সী সাধারণ মানুষ যে সময়ে ৪ বার ডাক্তারের কাছে যাবেন,
সমবয়সী একজন মেডিটেশনকারী যাবেন ১ বার।
শোকর আল
হামদুলিল্লাহ এখন অনেকেই নিয়মিত মেডিটেশন করছেন। তবে আমি নিশ্চিত, একটা বিষয়ে
অনেকেই উদাসীন সেটা হল ব্যায়াম। অনেকেই মনে করেন ব্যায়াম মানে হাঁপাতে হাঁপাতে
জগিং করা বা ডাম্বেল বারবেল নিয়ে ভারী ব্যায়াম করা। আর জিমে না গিয়েও যে ব্যায়াম
করা যায় সেটাতো অনেকে বিশ্বাসই করতে চান না। অথচ কোয়ান্টাম ব্যায়াম কিন্তু খুব
সহজ। আপনি চাইলেই আপনার ঘরের মেঝেতে ৫০০ টাকা দামের ৬ ফুট লম্বা আর দুই ফুট চওড়া
একটা ইয়োগা ম্যাট বিছিয়ে প্রতিদিন মাত্র দশ মিনিট ব্যায়াম করে নিজেকে সুস্থ রাখতে
পারেন।
আমরা
কিন্তু একটা ভুল করি। যখন শুরু করি, একসাথে সব ব্যায়াম করার চেষ্টা করি। আবার যখন
বাদ দেই সব এক সাথে বাদ দেই। কেন ? চারটা করে করি, তবুও প্রতিদিন করি।
এইযে
মেডিটেশনের কথা বলছি, ব্যায়ামের কথা বলছি, এগুলো শিখতে কিন্তু আপনাকে কাড়ি কাড়ি
টাকা খরচ করতে হচ্ছেনা।
আমার পরম
শ্রদ্ধেয় গুরুজী সবসময় একটা কথা বলেন যে জ্ঞানের কোনো কপিরাইট হয় না। তাই তিনি
কোয়ান্টামের ওয়েব সাইটে সব মেডিটেশন আর ব্যায়ামের বই দিয়ে দিয়েছেন। যে কেউ ফ্রি
ডাউনলোড করে শিখতে পারে।
সবশেষে
একটা ঘটনা বলি-
মধু নিয়ে
কাজ করি, তাই আমাদের বাসায় প্রায়ই বাইরে থেকে মৌমাছি আসে। বাসায় ছোট ছোট বাচ্চা
আছে তাদেরকে মৌমাছি কামড় দেয় সেজন্য আমরা কি করি মৌমাছি আসলে সেটাকে পলিথিনে আটকে
ফেলি। অনেক সময় এমন হয়েছে রাতের বেলা মৌমাছি ধরেছি পরের দিন সকালে অফিসে যাবার সময়
দূরে সেটাকে ছেড়ে দিয়ে এসেছি।
একদিন
সকাল বেলা অফিসে যাবার জন্য রেডি হচ্ছিলাম। এমন সময় একটা মৌমাছি ঢুকে পড়ল। সাথে
সাথে সেটাকে পলিথিনে আটকে ফেললাম। বাচ্চারা হাত দিয়ে দিতে পারে এই ভেবে পলিথিনটা
একটা চেইনওয়ালা চারকোনা ব্যাগে রেখে দিলাম। মাত্র পনের মিনিট পরে পলিথিনটা বের করে
দেখি মৌমাছিটা মারা গেছে। অথচ আমি নিশ্চিত যে মৌমাছিটা কোনো রকম আঘাত পায়নি বা
শ্বাস বন্ধ হয়েও মরেনি। আমি হঠাৎ বুঝতে পারলাম মৌমাছিটা আসলে মরে গেছে অন্ধকারের
কারণে। যখন তাকে হঠাৎ করে আলো থেকে অন্ধকার ব্যাগের মধ্যে ঢোকানো হয়েছে সে মনে
করেছে এখান থেকে আর বের হওয়া যাবেনা। তাই সে আশা হারিয়ে মরে গেছে।
আসলে বেঁচে
থাকার জন্য সুস্থ থাকার জন্য আশাবাদী হওয়া খুব জরুরী । আর আশাবাদী হওয়ার জন্য
থাকতে হয় প্রাণবন্ত মানুষদের সাথে। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন কিন্তু এরকম প্রাণবন্ত
মানুষদের মিলনমেলা। সেখানে নিয়মিত গেলে তাদের সংস্পর্শে আসুস্থ মানুষও প্রাণবন্ত
হয়ে ওঠে। তাই সবাইকে অনুরোধ করছি শুক্রবারের সাদাকায়নে বা মঙ্গলবারের আলোকায়নে নিয়মিত হবেন। তাহলে আপনি
সুস্থতা এবং সঠিক জীবনদৃষ্টির একটা চর্চার মধ্যে থাকবেন।
পরম
করুনাময় আমাদের সবাইকে পরিপূর্ণ সুস্থতা সহকারে প্রশান্তিময় দীর্ঘ জীবন দান করুন।
অপ্রয়োজনীয় ওষুধ কেন খাবেন? নিরাময় প্রতিটি মানুষের সহজাত
- Product Code: অপ্রয়োজনীয় ওষুধ কেন খাবেন? নিরাময় প্রতিটি মানুষের সহজাত
- Availability: Out Of Stock
-
Tk. 0
- Ex Tax: Tk. 0